নিজস্ব প্রতিবেদক:: অবশেষে করোনার কাছে হার মেনে চলে গেলেন বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সিলেট-৩ আসনের টানা তিন বারের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। তিনি বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) বেলা ২টা ৪০ মিনিটে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি……..রাজিউন)।
সিলেটের তিনবারের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে গোটা সিলেটবাসী শোক স্তব্ধ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে তার নিজ জন্মস্থান ফেঞ্চুগঞ্জবাসী হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। অনেকে ভেঙে পড়েন কান্নায়। পুরো সিলেট জুড়ে নেমে আসে বিষাদের ছায়া।
এছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করে ভাবাবেগপূর্ণ স্ট্যাটাস দেন সিলেটের সর্বস্তরের মানুষজন। আগামী এক শ বছরেও এমন একজন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী আসবে না না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অনেকে। সিলেটের ১৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে সিলেট ৩ আসনের এমপি সামাদ চৌধুরী ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নেও তিনি নজির সৃষ্টি করেছিলেন। তার জন্মস্থান ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আজ যেন সিলেটের আরেকটি নগরীতে পরিণত হয়েছে।
রাজনৈতিক জীবনে সফলতার শিখরে উঠা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী একজন স্বপ্নবাজ নেতা ছিলেন। নিজের উন্নত রুচি আর মানুষের চাহিদাকে মূল্যায়ন করে আপন করে সাজিয়েছেন পুরো ফেঞ্চুগঞ্জকে। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, খেলাধুলার স্থান, চিকিৎসাকেন্দ্র সহ সর্বত্র উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে বৃহস্পতিবার পাড়ি জমান পরপারে। তাঁর মৃত্যু রাজনৈতিক মাঠেও অপূরণীয় ক্ষতি বলে অভিমত দিচ্ছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে এমপি কয়েসের ভাই আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় তারা এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর আত্মার মাগফিরাত কামনা ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন।
মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর ব্যক্তিগত সচিব জুলহাস আহমদ জানান, রোববার রাতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার সকালে তিনি করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। বিকেলে তার ফলাফল পজিটিভ আসে। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।
জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। গত রোববার (৭ মার্চ) তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়ে বিমানে ওঠার সময় হাঁপিয়ে পড়েন এবং বিমানের মধ্যেই অসুস্থ অনুভব করায় সেখান থেকে সরাসরি তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়।
তার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে এই সংসদ সদস্য করোনার টিকা নিয়েছিলেন। তারপর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল না। কয়েক দিন আগে নিজের এলাকা ফেঞ্চুগঞ্জে এসেছিলেন তিনি। সামাদ চৌধুরী কয়েসের মরদেহ শুক্রবার (১২ মার্চ) সকাল ১১টায় হেলিকপ্টারযোগে তাঁর ফেঞ্চুগঞ্জস্থ নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। এদিন বাদ আসর জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে অবস্থা বিবেচনায় সময় পরিবর্তন হতে পারে।
এছাড়াও জানাযার স্থান এবং সংখ্যা এখনও নির্ধারণ করা হয়। বিষয়টি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শোক : সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি।
শোকবার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মাহমুদ উস সামাদ আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সজ্জন ও জ্ঞানী এ সংসদ সদস্য ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের ধারক ও বাহক। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটবাসীসহ জাতি একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবককে হারালো।
শোকপ্রকাশ করে তিনি বলেন, নিবেদিতপ্রাণ এ রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক সবসময় দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। করোনাকালে জনগণের পাশে থেকে যেভাবে কাজ করেছেন, তা সর্বমহলে প্রশংসনীয় ছিলো। তাঁর মৃত্যুতে সিলেটের রাজনীতিতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো তা অপূরণীয়। ড. মোমেন মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবার ও রাজনৈতিক অনুসারীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর শোক : বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক, সিলেট-৩ আসন থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী এমপির মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এক শোক বার্তায় তিনি মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের শোক : সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছের মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। বৃহস্পতবিার সিলটে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান শোক প্রকাশ করেন ও মরহুমরে আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।